দেশে আলুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এতে দাম কমবে, মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্তদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। দেশে আলুর উৎপাদন বেড়েছে প্রচুর। আমরা বলি, আলু উদ্বৃত্ত থাকে। আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি ও উন্নত জাত প্রবর্তনের কারণে উৎপাদন বেড়েছে।
তিনি বলেন, আবহাওয়া আলু উৎপাদনের অনুকূল। আন্তর্জাতিক বাজারে আলু রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এ বছর আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এ দাম বেড়ে যাওয়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। এতে নিম্নআয়ের মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। গত দুদিনে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
আরও পড়ুন: 'বিএনপি বুঝুক বা না বুঝুক, প্রত্যেক মানুষের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ': বিদেশি কূটনীতিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কোল্ড স্টোরেজে আলু থাকার পরও দাম এত বাড়বে কেন- সেই প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, আমরা আলুর যে দাম স্থির করে দিয়েছিলাম, তাতেও তাদের লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু সেই দামের ধারেকাছেও তারা থাকছে না।
তিনি বলেন, কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা একটি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা আলু বের করেন না, তারা আলু লুকিয়ে রাখেন।
মন্ত্রী বলেন, আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে আলু আমদানি করতে চায় তারা। আমরাও সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেখেছি, এত দাম দিয়ে মানুষ আলু কিনতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর দাম কম। তারা আলু আনতে চাচ্ছে। আমরা সম্মতি দিয়েছি। আজকে থেকেই আইপিও ইস্যু করা শুরু হবে। এতে দাম কমবে, মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তারা নিজেদের তৎপরতা আরও বাড়াবে, যেন বাজারে কোল্ড স্টোরেজ সিন্ডিকেট যেভাবে আলুর দাম বাড়াচ্ছে, তা কমিয়ে আনা। আড়ৎ ও কোল্ড স্টোরেজ মিলেই দাম বাড়াচ্ছে। এটা কমিয়ে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও তৎপরতা শুরু করবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছরও আমরা আলু রপ্তানির চেষ্টা করেছি। কিছু রপ্তানি হয়েছে। এ বছরও রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু যতটুকু রপ্তানি হয়েছে, তাতে দাম এত অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কথা না।
তিনি বলেন, গত বছর আলুর দাম অনেক কম ছিল, তখন চাষিরাও দাম পাননি, কোল্ডস্টোরেজ মালিকরদেরও লোকসান হয়েছে। কিন্তু এবার কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা তাদের সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তারা এবার সর্বাত্মক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, গত বছর কৃষকরা সরিষা চাষ করেছে, অথবা আলু উৎপাদন করেনি, যেটা আমাদের মূল্যায়নে আমরা সঠিকভাবে জরিপ করতে পারিনি। তাহলে আমরা একেবারেই রপ্তানি করতাম না। কিন্তু আমরা তো আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে চাই। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আলু রপ্তানি করেছি।
আগামী দুই বছরের মধ্যে আলু ও পেঁয়াজের সমস্যা সমাধান হবে। আলু ও পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী।
বারবার সিন্ডিকেটের কথা বলছেন, কিন্তু মানুষতো অসহায়- এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা সিন্ডিকেটের কথা বলছি না, আপনারা বলছেন। কিন্তু একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট যে কোনোক্রমেই আলুর কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না আ. লীগ: কৃষিমন্ত্রী
চলতি বছর কৃষিখাতে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ: কৃষিমন্ত্রী